Chronic Kidney Diseases (CKD)

মানবদেহের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কিডনি । দৈনন্দিন কার্য্যাবলীতে দেহের অভ্যন্তরে সৃষ্ট বর্জ্যপদার্থসমূহ রক্তবাহিত হয়ে কিডনির মাধ্যমেই নিষ্কাশিত হয় এবং প্রস্রাবের সাথে নির্গত হয় । এছাড়া কিডনির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো হচ্ছেঃ

  • রক্তচাপ (Blood Pressure) নিয়ন্ত্রণ করা
  • শরীরের পানির ভারসাম্য (Water Balance) রক্ষা করা
  • লোহিত রক্ত কণিকা (RBC) তৈরীকে উদ্দীপ্ত করা
  • শরীরের লবন ও খনিজ পদার্থের (Electrolytes and minerals) ভারসাম্য রক্ষা করা
  • শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় অম্ল – ক্ষার ভারসাম্য (Acid-Base balance) রক্ষা করা, ইত্যাদি।

চিকিৎসার মাধ্যমে প্রারম্ভিক / প্রাথমিক রোগসমূহ নিরাময় বা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্রমবর্ধমান কিডনি বিকলতার কোন প্রত্যক্ষ চিকিৎসা নেই। অর্থাৎ বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থায় অসুস্থ্য বা বিকল কিডনিকে সুস্থ্য এবং কর্মক্ষম করে তোলা সম্ভব নয়, বরং সেক্ষেত্রে সম্পূরক পদ্ধতিতে কিডনির কার্যাবলী চালিয়ে নেয়া হয়। যেমন, লোহিত রক্তকণিকার জন্য ইরাইথ্রোপয়টিন ও রক্ত সঞ্চালন, খনিজ পদার্থের ঘাটতি মিটাতে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফেট ইত্যাদি, অম্ল – ক্ষার ভারসাম্যহীনতায় বাইকার্বোনেট ইত্যাদি বাহির হতে সরবরাহ করা হয় এবং সর্বোপরি বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য বিভিন্ন ধরনের ডায়ালাইসিস করা হয়ে থাকে। এ অবস্থায় অকেজো কিডনির কার্যকারিতা ফিরিয়ে আনতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সর্বাধুনিক আবিষ্কার স্টেম সেল ভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। এক্ষেত্রে রোগীর নিজস্ব অস্থি-মজ্জা (Bone marrow) অথবা চর্বি (Adipose tissue) থেকে সংগৃহিত স্টেম সেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তবে অস্থি-মজ্জার চেয়ে চর্বি থেকে সংগৃহীত স্টেম সেলের ব্যবহার অনেক বেশি কার্যকর । এতে স্টেম সেল সহজলভ্য হয় এবং দূষণের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কিডনির চিকিৎসায় চর্বির ভিতরে সুপ্ত অবস্থা থাকা মেসেনকাইম্যাল স্টেম সেল (Mesenchymal stem cell-MSC) ব্যবহার করে এখন পর্যন্ত আশাপ্রদ ফল পাওয়া গেছে।

স্টেম সেল হলো মানবদেহের একটি আদি কোষ-যা ভ্রুণের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে এবং এই কোষগুলো থেকেই পর্যায়ক্রমে দেহের অন্যান্য সব ধরনের কোষ , কলা (Tissue) ও অঙ্গ প্রত্যঙ্গ (Organ) তৈরী হয়। এই স্টেম সেল গুলোর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট হচ্ছে এরা বিভাজনের মাধ্যমে অবিকল নিজের মতো নতুন কোষ তৈরী করতে পারে, আবার অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের সম্পূর্ণ নতুন প্রকৃতির কোষও তৈরী করতে সক্ষম, আবার সুদীর্ঘমেয়াদে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে এবং শারীরবৃত্তীয় প্রয়োজনে যথাযথ উদ্দীপনার মাধ্যমে সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। রোগাক্রান্ত বা মৃতপ্রায় কোষের মেরামত বা প্রতিস্থাপনের জন্য সুপ্ত স্টেম সেলকে সহজেই পৃথক করা যায়। পৃথকীকৃত মেজোডার্মাল স্টেম সেল উদ্দীপ্ত করা হলে তা অবস্থানভেদে পেশী, হাড়, তরুণস্থি, হৃৎপিন্ড ও রক্তনালী, স্নায়ুকোষ, ফুসফুস, কিডনী বা লিভারের মতো বিশেষ ধরনের কোনো কোষে রূপান্তরিত হয়ে রোগাক্রান্ত বা মৃতপ্রায় কোষের মেরামত বা প্রতিস্থাপন করতে পারে । স্টেম সেল সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে- ভ্রুনীয় (Embryonic stem cell) স্টেম সেল এবং পরিণত স্টেম সেল (Adult stem cell)। অস্থিমজ্জা , হাড়, চর্বি এবং মাংসপেশীসহ মানবদেহের বিভিন্ন টিস্যু থেকে পরিণত স্টেম সেল পাওয়া যায়। এ ধরনের স্টেম সেল শরীরের অকেজো হয়ে যাওয়া অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যেমন কিডনি, লিভার, রক্তনালী সচল করা, ক্ষত সারানো, ক্ষতিগ্রস্ত স্নায়ু পুনরুজ্জীবিত করা, স্বাস্থ্যকর নাইট্রিক অক্সাইড রিসেপটর ফিরিয়ে আনতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসা উদ্ভাবন করছেন। দুরারোগ্য বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী, ব্যয়বহুল ও কষ্টদায়ক চিকিৎসার পরিবর্তে স্টেম সেল নির্ভর চিকিৎসা সাফল্যমন্ডিত প্রমাণিত হচ্ছে।




 

কিডনির দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার প্রতিকারের ক্ষেত্রেও স্টেম সেল চিকিৎসা কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত। এই পদ্ধতি কিডনির অকেজো কোষকে সক্রিয় করে, নতুন কোষ উৎপন্ন করে, নতুন করে কোষের মৃত্যু রোধ করে এবং নিজস্ব স্টেম সেল গুলোকে উদ্দীপ্ত করে কিডনীর ক্ষত সারিয়ে তোলে। বিভিন্ন ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় (Clinical trial) ইতোমধ্যেই এই পদ্ধতির কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া এই চিকিৎসা পদ্ধতির সফল ব্যবহার নিয়ে অসংখ্য ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা করা হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় ভাবে অবশ করে (Local Anaesthesia) পেটের, উরুর অথবা মেরুদন্ডের পার্শ্ববর্তী চামড়ার নীচের চর্বি সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে এই চর্বি প্রক্রিয়াকরনের মাধ্যমে পরিণত স্টেম সেল (Adult stem cell) সংগ্রহ করা হয় যা শিরাপথে বা কিডনীর নিজস্ব ধমনী (Renal Artery)- র মাধ্যমে রোগীর শরীরে সঞ্চালন করা হয়। নিজস্ব শরীরের চর্বি হতেই প্রক্রিয়াজাত করা হয় বলে ট্রান্সপ্লান্ট প্রত্যাখ্যান (Transplant rejection) বা অন্য কোন জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্ভবনা থাকে না। কিডনির স্থায়ী চিকিৎসার জন্য ডায়ালাইসিস ও ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের মতো ব্যয়বহুল, ঝুঁকিপূর্ণ ও কষ্টদায়ক চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে নতুন করে ভাববার সময় এসেছে। স্টেম সেল চিকিৎসা পদ্ধতি রোগীকে পরিবারের অন্য সদস্যদের উপর নির্ভরশীল হয়ে বেঁচে থাকার পরিবর্তে কর্মক্ষম ও উৎপাদনশীল নাগরিক হিসেবে পুনর্জীবন দান করে। প্রখ্যাত কিডনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ ফিরোজ খানের তত্ত্বাবধানে, বাংলাদেশে ইনস্টিটিউট অব লেজার সার্জারি এন্ড হাসপাতাল এবং BLCS (বাংলাদেশ লেজার এন্ড সেল সার্জারি) হাসপাতাল এর যৌথ ব্যবস্থাপনায়, ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাস থেকে কিডনির এই চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে কাজ চলছে।

Contact the BLCS team

Make an appointment

Call us on any of our telephone lines. Our working hours are between 7:00 a.m. to 11:59 p.m. everyday of the week.

House-2, Road-2, Block-D, Sector-2, Aftabnagar, Dhaka 1212

02226600994, 02226600995,
01751931530, 01618418393

dryakubali@blcsbd.com