অস্টিওআর্থ্রাইটিসের লক্ষণ ও কারণ:-
হাঁটুর হাড়ের জোড়ার ব্যথা, র্স্পশকাতরতা, শক্ত হয়ে যাওয়া, অনড় অবস্থা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তরল পর্দাথ জমে ফুলে যাওয়া অস্টিওআর্থ্রাইটিসের লক্ষণ। এই রোগের আক্রান্ত হলে রোগী চলাচল ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এমনকি সামান্য নড়াচড়া করতে ও তীব্র ব্যথা অনুভব করেন। রোগীর সাধারণত অবিরাম অসহনীয় ব্যথা বা হড়ের সঙ্গে লেগে থাকা মাংসপেশি ও লিগামেন্ট বা রগে ( হাড় ও মাংসের সঙ্গে সংযুক্ত তন্ত) জ্বালাপোড়া অনুভব করেন। আক্রান্ত জোড়া নড়াচড়া করলে বা র্স্পশ করলে ‘ক্র্যাক’ (ক্রেপিটাস) শব্দ হতে পারে। এ অবস্থায় রোগী মাংসপেশির খিঁচুনি ও রগে সংকোচন অনুভব করতে পারেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জোড়ার ভেতরে পুঁজ জাতীয় তরল পদার্থ জমা হতে পারে। হাড়ের জোড়ার নিজস্ব মেরামত ক্ষমতা কমে যাওয়া এবং মেকানিক্যাল চাপকে অস্টিওআর্থ্রাইটিসের প্রধান কারণ বলে বিবেচনা করা হয়।
রোগ নির্ণয় ও প্রচলিত চিকিৎসা:
রোগে ইতিহাস ও শরীরিক পরীক্ষার পর প্রয়োজনে সাধারণ এ·-রে (X-Ray) ও মাধ্যমে রোগ সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পাওয়া যেতে পারে এবং পরবর্তীতে এমআরআইয়ের (গজও) মাধ্যমে সম্পর্ণ নিশ্চিত হওয়া সম্ভব। জোড়ার ভিতর আকার ও আয়তন পরিবর্তন, জোড়ার পিচ্ছিল তরুণাস্থিসংলগ্ন হাড় শক্ত হয়ে যাওয়া (Subchondral Sclerosis) তরুণাস্থির নিচে সিষ্ঠ তৈরি হওয়া (Subchondral cyst formation) এবং নতুন হাড় গজানোরসহ সাধারণ পরিবর্তন গুলো এ·-রে ও আমআরআইয়ের মাধ্যমে ধরা পড়ে। সাধারণত ব্যায়াম, জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং ব্যথানাশকের সমন্বেয়ে অস্টিওআর্থ্রাইটিসের চিকিৎসা করা হয়। এরপরও ব্যথা অসহনীয় হয়ে উঠলে এব শারীরিক অক্ষমতা পঙ্গুত্বের পর্যায়ে চলে গেলে অপারেশনের মাধ্যমে জোড়া পুনঃস্থাপন করে রোগীর জীবনযাত্রার মান উন্নত করা হয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের সর্বশেষ আবিস্কার স্টেম সেলঃ
হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিস সহ যে কোন হাড়-জোড়া সর্বাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি হলো কোষের পুনর্জন্ম পদ্ধতি বা রিজেনারেটিভ মেডিসিন (regenerative medicine)। এই পদ্ধতিতে রোগীর শরীর (হাড়) থেকে স্টেম সেল সংগ্রহ করে জোড়ার ভেতরে স্থাপন করা হয় যা পর্যায়ক্রমে নতুন কোষ তৈরির মাধ্যমে অসুস্থ ও ক্ষয়িষ্ণু অংশগুলোকে প্রতিস্থাপন করে। স্টেম সেল নিজে অবিকল নিজের মতো নতুন সেল তৈরি করতে পাবে এবং রোগাক্রান্ত বা মৃতপ্রায় কোষের মেরামত বা প্রতিস্থাপনের জন্য সহজেই পৃথক করা যায়। পৃথকীকৃত মেজোডার্মাল স্টেম সেল শরীরের অকেজো হয়ে যাওয়া রক্তনালি সচল করা, ক্ষত সারানো, ক্ষতিপ্রস্ত স্নায়ু পুনরুজ্জীবিত করা, স্থাস্থ্যকর নাইট্রিক অক্সাইড রিসেপ্টর ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রাখতে পারে। একই স্টেম সেল ববহার করে হাড়ের অকেজো কোষ গুলোকে পুনরাজ্জীবিত করা হয়। অস্টিওআর্থ্রাইটিসের কারণে ক্ষয় হওয়া হাড়ের তরুণাস্থিকে পুনরায় সচল করার জন্য রোগীর নিজের শরীর থেকে সংগৃহীত স্টেম সেল ব্যবহার করা হয়। এর ফলে আক্রান্ত স্থানটি পুনর্গঠন হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলোতে গবেষণায় দেখা গেছে, স্টেম সেল চিকিৎসা নিয়ে চিকিৎসকের পরার্মশ অনুযায়ী চলতে পারলে অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা হাঁটুর সমস্যা সর্ম্পূণ ভালো হওয়া সম্ভব।