মানুষের মেরুদন্ডে শক্ত হাড় ছাড়াও দুই হাড়ের মধ্যবতী স্থানে নরম হাড় (ইন্টারভার্টেব্রাল ডিস্ক) থাকে- যা গাড়ীর স্প্রীং বা শক এবজরবারের মতো কাজ করে। সাধারণত ভারী জিনিস উঠানো, আঘাত, শরীরে বিশেষ অবস্থায় ঝুঁকি খাওয়া সহ নানাবিধ কারণে ডিস্কের স্থানচ্যুতি(প্রোল্যান্স) হয়ে সংলগ্ন মেরুরজ্জু (স্পাইনাল কর্ড) অথবা স্নায়ুমূল (নার্ভরুট) অথবা উভয়ের উপরের চাপ পড়তে পারে। কোমরের (লাম্বার) ডিস্ক প্রল্যাপ্স রোগী মাজার তীব্র ব্যথা অনুভব করে। ফলে, রোগী বসতে বা দাড়াঁতে পারে না। কোমরে উৎপন্ন ব্যথা স্নায়ুসমূহ (নার্ভ) কোমর থেকে পা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে মাজা ব্যথার পাশাপাশি এক পার্শ্বে বা উভয় পার্শ্বের রানে, হাটুঁতে, হাঁটুর নীচে বা পায়ের আঙ্গুল পর্যন্ত যে কোন জায়গায় ব্যথা অনুভব হতে পারে। এ ছাড়াও উপরোক্ত জায়গাগুলোতে ঝিন-ঝিন, শিন-শিন করে, পায়ের বোধশক্তি কমে যায়, পর্য়ায়ক্রমে পা দূবর্ল হয়ে যেতে থাকে এবং এক পর্যায়ে রোগী হাঁটতে, দাঁড়াতে এমনকি বসতে পারে না। আবার ঘাড়ে (সারভাইকাল) উৎপন্ন ব্যথা স্নায়ুসমূহ ঘাড় থেকে হাত পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকে। কাজেই ঘাড়ের ডিস্ক প্রোল্যাপ্সে প্রাথমিক পর্যায়ে ঘাড়ের ব্যথার পাশাপাশি ডান বা বাম হাত বা উভয় হাতে ব্যথা অনুভব হতে পারে। লাম্বার ডিস্ক প্রোল্যাপ্সে মতো এখানে ও হাত ঝিন-ঝিন, শিন-শিন করে, হাতে বোধ শক্তি কমে যায়। এক পর্যায়ে হাত দূবর্ল হয়ে যেতে থাকে।
ভার্টেব্রাল ডিস্ক গঠনগতভাবে নিউক্লিয়াস প্যালপোসাস (কেন্দ্রমধ্যস্থিত জেলির মতো পদার্থ) এবং অ্যানিউলাস ফাইব্রোসাস (চার পার্শ্বস্থ শক্ত ফাইবার বা আঁশ ও ছোট ছোট রক্তনালী) দিয়ে তৈরী। দাড়ানো অবস্থায় বা ভারি কিছু বহনকালে কেন্দ্রস্থিত জেলির উপর চাপ পড়ে। কিন্তু শক্ত অ্যানিউলাস ফাইব্রোসাস সেই চাপ নিয়ন্ত্রণ করে ডিস্কের গঠন ঠিক রাখে। কিন্তু বেশি ওজন বহনে বা অনিয়ন্ত্রিত নড়াচড়ায় নিউক্লিয়াস প্যালপোসাসের উপর মাত্রাতিরিক্ত বা অসম চাপ পড়ে গেলে সেই অতিরিক্ত চাঁপ (Raised Intradiscal Pressure) অ্যানিউলাস ফাইব্রোসাস আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ফলে, নিউক্লিয়াস প্যালপোসাস অ্যানিউলাস ফাইব্রোসাস এবং কখনও কখনও অ্যানিউলাস ফাইব্রোসাস ছিঁড়ে কোন এক দিকে বের হয়ে আসে। ফলে, মেরুরজ্জ (স্পাইনাল কর্ড) অথবা স্নায়ুমূল (নার্ভরুট) অথবা উভয়ের উপরই চাপ পড়ে।
১৯৩৪ সাল থেকে প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে পিঠের চামড়া, মাংস ও হাড়ের মাঝখানে দিয়ে কেটে বেরিয়ে আসা বা প্রোল্যাপ্সড্ নিউক্লিয়াস প্যালপোস্যাসের অংশটুকু তুলে এনে স্নায়ু রজ্জুর চাপকে প্রশমিত করা হয়। গবেষণা বা ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে, পারকিউটেনিয়াস লেজার ডিস্ক ডিকস্প্রেশনের (PLDD) মাধ্যমে নিদিষ্ট মাত্রার ও নির্দিষ্ট ধরনের লেজার রশ্মি প্রয়োগ করে অতি সহজেই নিউক্লিয়াস প্যালপোসাসসের অংশ বিশেষ বাস্পায়িত করার মাধ্যমে এর অতিরিক্ত চাপ কমানো সম্ভব। ফলে, স্থানচ্যুত (প্রোল্যাপ্সড) ডিস্ক পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে এবং স্পাইনাল কর্ড ও নার্ভরুটের উপর থেকে চাপ কমে গিয়ে রোগী স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। এছাড়া লেজারের অপটো-থারমো-মেকানিক্যাল স্টিমুলেশনের মাধ্যমে ছিঁড়ে যাওয়া এ্যানিউলাস ফাইব্রোসাস পুরো ক্ষমতাটাকেই রিপেয়ার বা পূর্বাবস্থানে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এই পদ্ধতিতে হাড়, মাংস ও চামড়া কাঁটার যেমন প্রয়োজন হয় না তেমনই অজ্ঞান করারও প্রয়োজন হয় না। ফলে ডায়াবেটিক বা হৃদরোগীদের ক্ষেত্রে লেজার সার্জারী তেমন কোন অন্তরায় হয় না। আর হাড় মাংস না কাটার ফলে লেজার প্রয়োগের স্থানেও দূর্বল হয় না এবং কোন ক্ষতচিহ্ন (স্কার) থাকে না- যে কোন কারণে ভবিষ্যতে এই অংশে স্কারের টানের কোন ব্যথা অনুভূত হয় না।
উন্নত বিশ্বে ডিস্ক প্রোল্যাপ্সের বেশি ভাগ রোগীরই এখন আর কেটে অপারেশন করা হয় না। সারভাইক্যাল/লাম্বার ডিস্ক প্রোল্যাপ্সের বেশী ভাগ রোগীই পারকিউটেনিয়াস লেজার ডিস্ক ডিস্প্রেশনের (PLDD) মাধ্যমে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করে থাকে। এখানে উল্লেখ্য যে, এই চিকিৎসায় যে ধরনের বা যে মাত্রার লেজার রশ্মি ব্যবহার করা হয়ে থাকে তার কোন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। আমেরিকার ফেডারেল ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন (US-FDA) ইতোমধ্যে (PLDD) কে নিরাপদ চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
মেরুদন্ডের হাড়গুলোর ভেতর দিয়ে মাথার খুলি থেকে নেমে আসা রগ বা স্পাইনাল কর্ডে দুই হাড়ের মধ্যবর্তী ডিস্কের কিছু অংশ বের হয়ে গিয়ে চাপের সৃষ্টি করলে ওই স্নায়ুমুলে ও সেখান থেকে বেড়িয়ে যাওয়া নার্ভের বিচরন অংগে ব্যথা হয়। এজাতীয় ব্যথাকে প্রচলিত ভাষায় মেরুদন্ড হাড়ের ক্ষয়/ হাড়ের ফাঁক হয়ে যাওয়া/ হাড়ের বৃদ্ধি বলা হয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে চিকিৎসাশাস্ত্রে এই জটিলতাকে ডিস্ক প্রোল্যাপ্স / হার্নিয়েটেড ডিস্ক/ স্পাইনাল স্টেনোসিস বলা হয়। ডিস্কের স্থানচ্যুতি বা সরে যাওয়ার মাত্রার ওপর নির্ভর করে ডিস্ক প্রোল্যাপ্স বা PLID রোগের জটিলতা।
দীর্ঘমেয়াদি ব্যথায় রোগীরা সাধারণত ব্যথানাশক বা Pain Killer-এর ওপর নির্ভর করে উপশমের চেষ্টা করে। নিয়মিত ব্যথানাশক খাওয়ার ফলে কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। তাই ঘাড়, পিঠ ও কোমর ব্যথায় অবহেলা না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত। ব্যথা বাড়তে থাকলে প্রচলিত অপারেশনের ঝুঁকি ছাড়াই লেজার চিকিৎসার মাধ্যমে কাটা-ছেঁড়া ও রক্তপাতহীন উপায়ে লেজার হাসপাতাল থেকে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা সম্ভব।
সার্ভাইক্যাল ডিস্ক প্রোল্যাপ্সের ক্ষেত্রে ঘাড়ের মেরুদন্ডের হাড় সরে গিয়ে ঐ স্থানে অবস্থিত স্নায়ুমূলে চাপ দেয় ফলে ঐ নার্ভ ও সম্পৃক্ত স্থানে ব্যথার সৃষ্টি হয়। এ জাতীয় ব্যথাকে সার্ভাইক্যাল রেডিওকোলোপ্যাথি বলা হয় । ঘাড়ের মেরুদন্ড ৭টি হাড় বা কশেরুকা নিয়ে গঠিত। এদেরেকে যথাক্রমে C1-C7 নামে চিহ্নিত করা হয়। যে অংশে সবচেয়ে বেশী হাড়ের স্থানচ্যুতি হতে দেখা যায় তা হলো- C5-C6 লেভেল (সার্ভাইক্যাল-৫ ও সার্ভাইক্যাল-৬) এবং C6-C7 (সার্ভাইক্যাল-৬ ও সার্ভাইক্যাল-৭ লেভেল)। আর C4-C5 লেভেল মাঝে মাঝে এবং C7-T1 লেভেল কদাচিৎ ডিস্ক সরে যেতে দেখা যায়। সার্ভাইক্যাল হার্নিয়েটেড ডিস্কের ফলে যে সকল ব্যথা ও স্নায়ুবিক দূর্বলতা দেখা দেয়:-
Call us on any of our telephone lines. Our working hours are between 7:00 a.m. to 11:59 p.m. everyday of the week.
House-2, Road-2, Block-D, Sector-2, Aftabnagar, Dhaka 1212
02226600994, 02226600995,
01751931530, 01618418393
dryakubali@blcsbd.com